ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

২৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৪ রমজান ১৪৪৬

বিশ্বের প্রথম ‘কাঠের স্যাটেলাইট’ মহাকাশে পাঠাচ্ছে জাপান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮:৪৭, ৫ নভেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১৮:৪৮, ৫ নভেম্বর ২০২৪

বিশ্বের প্রথম ‘কাঠের স্যাটেলাইট’ মহাকাশে পাঠাচ্ছে জাপান

বিশ্বের প্রথম কাঠের তৈরি স্যাটেলাইট তৈরি করল জাপানের গবেষকেরা। গত মঙ্গলবার স্যাটেলাইটটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি চাঁদ ও মঙ্গলে অভিযানের জন্য কাঠ ব্যবহারের একটি প্রাথমিক পরীক্ষা হিসেবে পাঠানো হয়েছে। এই স্যাটেলাইটটির নাম ‘লিগনোস্যাট’। স্যাটেলাইটটি যৌথভাবে তৈরি করে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় ও গৃহ নির্মাতা কোম্পানি সুমিতোমো ফরেস্ট্রি। এটি প্রথমে স্পেসএক্স মিশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠানো হবে এবং পরে এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার (২৫০ মাইল) ওপরে কক্ষপথে ছেড়ে দেওয়া হবে।

লিগনোস্যাট একটি লাতিন শব্দ। যার অর্থ ‘কাঠ’। গবেষকেরা বলেন, হোনোকি গাছ থেকে এই কাঠ পাওয়া গেছে। হোনোকি এক ধরনের মাগনোলিয়া প্রজাতির গাছ, যা জাপানে স্বাভাবিকভাবে জন্মায় এবং ঐতিহ্যগতভাবে তলোয়ারের খাপ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ১০ মাসব্যাপী পরীক্ষার পর কাঠটি মহাকাশযানের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে নির্ধারণ করা হয়। এটি তৈরিতে জাপানের ঐতিহ্যগত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে কোনো আঠা বা স্ক্রু এর প্রয়োজন নেই।
স্যাটেলাইটটি হাতের তালুর সমান, যার প্রতিটি দিকের পরিমাপ মাত্র ১০ সেন্টিমিটার (চার ইঞ্চি)। এটি মহাকাশে মানুষের বসবাসের জন্য কাঠকে একটি পুনঃ ব্যবহারযোগ্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা পরীক্ষা করবে।

কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ে মানব মহাকাশ কার্যক্রম নিয়ে গবেষণা করেন মহাকাশচারী তাকাও দোই। তিনি এই প্রজেক্টের প্রধান। তাকাও বলেন, ‘কাঠ এমন একটি উপকরণ যেটি আমরা নিজেদের জন্য উৎপাদন করতে পারি। এটি ব্যবহার করে মহাকাশে ঘর তৈরি করতে পারব, সেখানে চিরকাল ধরে বসবাস করতে পারব এবং কাজ করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন,‘মহাকাশে কাঠ আরও টেকসই। কারণ পৃথিবীর মতো মহাকাশে কোনো পানি ও অক্সিজেন নেই যা এর পচনে বা জ্বালাতে সাহায্য করবে। কাঠের স্যাটেলাইট এর নষ্ট হয়ে গেলেও পরিবেশে কম প্রভাব ফেলে।’

চন্দ্র ও মঙ্গলে গাছ লাগানো এবং কাঠের বাড়ি নির্মাণের জন্য ৫০ বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তাকাও দোইয়ের দল। তারা একটি নাসা–সার্টিফায়েড কাঠের স্যাটেলাইট তৈরি করছে, যাতে প্রমাণ করা যায় যে, কাঠ একটি ‘মহাকাশ-যোগ্য’ উপকরণ। কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান স্পেসোলজি সেন্টার জানিয়েছে, এটি ফ্লোরিডার নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে একটি মানুষবিহীন রকেটে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে । চন্দ্র ও মঙ্গলে গাছ লাগানো এবং কাঠের বাড়ি নির্মাণের জন্য ৫০ বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তাকাও দোইয়ের দল। এটি মহাকাশে মানুষের বসবাসের জন্য কাঠকে একটি পুনঃ ব্যবহারযোগ্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা কতটুকু তা পরীক্ষা করবে।

লিগনোস্যাটের সহনির্মাতা সুমিতোমো ফরেস্ট্রির একজন মুখপাত্র উৎক্ষেপণ ‘সফল’ হয়েছে জানিয়ে বলেন, এটি শিগগিরই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছবে। প্রায় এক মাস পর স্যাটেলাইটটির শক্তি ও স্থায়িত্ব পরীক্ষার জন্য মহাশূন্যে ছেড়ে দেওয়া হবে। স্যাটেলাইটটি থেকে পাঠানো ডাটা গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখবেন, এটি তাপমাত্রার অত্যন্ত পরিবর্তন সহ্য করতে সক্ষম কিনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের আশা,কাঠের উপাদানটি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় পুড়ে যাবে। এর ফলে পুরনো স্যাটেলাইট ফের পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় ধাতব কণার সৃষ্টি এড়ানো সম্ভব হতে পারে। এর ফলে বায়ুমণ্ডল কম দূষিত হবে।

আরও পড়ুন