শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১:৩৭, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১১:৩২, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪
শুরুটা হয়েছিল নিজ দেশের শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে জনগণের, বিশেষত বেকার তরুণদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ থেকে। তারুণ্যের সেই প্রতিবাদ দমাতে খড়্গ হাতে তুলে নেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার। রক্ত ঝরে রাজপথে। অশান্তি ও সংঘাত ছড়ায় দেশজুড়ে। সেই শুরু, এরপর দেশটির সংঘাত রূপ নেয় গৃহযুদ্ধে। এতে একে একে জড়িয়ে পড়ে আঞ্চলিক শক্তি থেকে শুরু করে বৈশ্বিক পরাশক্তিরা। প্রাণ যায় কয়েক লাখ মানুষের। দেখা দেয় ইতিহাসের ভয়াবহতম মানবিক সংকটের।
বলছি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ার কথা। ধন-মান-ঐতিহাসিক পুরাকীর্তিতে একসময়ের বেশ সমৃদ্ধ দেশটি এখন রীতিমতো ধ্বংসস্তূপ, যুদ্ধের ভারে শ্রান্ত। ২০১১ সালের মধ্য মার্চে দেশটিতে যে সংকটের সূচনা, তার আজও সমাধান হয়নি। গাজা, লেবানন আর ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিশ্ববাসী যখন সরব, ভুগছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়; তখন নতুন করে আলোচনায় সিরিয়া।
আসাদ পরিবারের কুক্ষিগত ক্ষমতা
সিরিয়ার কথা বলতে গেলে অবধারিতভাবে আসবে আল-আসাদ পরিবারের কথা। কেননা, টানা পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সিরিয়া শাসন করছে পরিবারটি। এর মধ্যে ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন হাফিজ আল-আসাদ। ২০০০ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর ওই বছরই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তাঁর ছেলে বাশার আল-আসাদ। টানা দুই যুগ (২৪ বছর) ধরে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে আছেন।
হাফিজের প্রাথমিক জীবন
হাফিজ আল-আসাদ তৎকালীন ফ্রান্স-অধ্যুষিত সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে লাতাকিয়া প্রদেশের ক্কারদাহা শহরে সংখ্যালঘু আলওয়াইত পরিবারে ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লাতাকিয়ার জুলস জামাল স্কুল হতে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। উল্লেখ্য যে হাফিজের পূর্বে তার পরিবারের কোন সদস্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেনি।
১৯৪৬ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে হাফিজ বাথ পার্টিতে যোগ দেন। তার পরিবার তার উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ যোগানে সমর্থ্য ছিলনা। স্কুল শেষ করে তাই হাফিজ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে সিরীয় মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন। এখানে তার সাথে তার পরবর্তী দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সহযাত্রী মুস্তাফা ত’লাসের দেখা হয়। সশস্ত্র বাহিনীতে থাকা অবস্থায় তিনি এর অধীনে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ লাভ করেন। দায়িত্ব পালন কালে হাফিজ বুদ্ধিমত্তা ও প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন যার কারণে তাকে উচ্চ প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রেরণ করা হয়। ১৯৫০ সালের দিকে হাফিজ আল-আসাদ সিরীয় বাহিনীতে একজন নিয়মিত বৈমানিক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন যে সময়ে তিনি মিত্রবাহিনীর প্রথম জেট বিমান গ্লস্টার মিটিয়ার চালিয়েছেন। সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে সময়ের সাথে পদবীর দিক থেকে হাফিজের উল্লেখযোগ্য উত্থান ঘটতে থাকে যার ফলে একটি সময়ে তিনি সিরিয়ার প্রতিরক্ষা কাঠামোতে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেন।
হাফিজের রাজনীতিতে উত্থান
হাফিজ আল-আসাদকে ‘আধুনিক সিরিয়া’র রূপকার বলা হয়। ১৯৪৬ সালে আরব সোশ্যালিস্ট বাথ পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। সিরিয়ায় বাথ পার্টিকে শক্তিশালী করতে হাফিজের অনেক বড় ভূমিকা ছিল। ১৯৬৬ সালে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানে বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন হাফিজ। রাজনৈতিকভাবে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে নিজ রাজনৈতিক গুরু ও সিরীয় নেতা সালাহ আল-জাদিদকে সরাতে অভ্যুত্থান ঘটান হাফিজ। পরের বছরই সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন তিনি।
‘খেলুড়ে’ নেতা হাফিজ
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বরাবর ‘খেলুড়ে’ নেতা ছিলেন হাফিজ আল-আসাদ। ১৯৭৩ সালে মিসর-ইসরায়েল যুদ্ধে তিনি মুসলিম মিত্র কায়রোর পক্ষে অবস্থান নেন। প্রায় দুই দশক পর ১৯৯১ সালে তিনিই আবার ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। ইসরায়েলের দখলে থাকা গোলান মালভূমি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় ভূমিকা রাখেন। ইরাকের নেতা সাদ্দাম হোসেনকে ‘দীর্ঘদিনের শত্রু’ মনে করতেন হাফিজ। ১৯৯০-৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে সিরিয়া বাগদাদের বিপক্ষে ছিল। তিনি এ যুদ্ধে পশ্চিমা জোটকে সমর্থন দিয়েছিলেন। টানা ২৯ বছর ক্ষমতায় থেকে ২০০০ সালের ১০ জুন দামেস্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান হাফিজ। এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের শাসনের সূচনা হয়। ওই বছরের ১৭ জুলাই প্রেসিডেন্ট পদে বসেন তাঁর ছেলে বাশার আল-আসাদ।
৩৪ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট
বাশারের জন্ম ১৯৬৫ সালে, দামেস্কে। শৈশবে দামেস্কে পড়াশোনা শুরু। তিনি দামেস্ক ইউনিভার্সিটি থেকে চক্ষুবিজ্ঞানে পড়েছেন। হতে চেয়েছিলেন চিকিৎসক। ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় পারদর্শী তিনি। হাফিজ আল-আসাদের উত্তরসূরি হওয়ার কথা ছিল না তাঁর ছোট ছেলে বাশার আল-আসাদের। প্রথা মেনে হাফিজের পর তাঁর বড় ছেলে বাসেল আল-আসাদ ক্ষমতার কেন্দ্রে আসবেন, এটাই ভেবেছিলেন অনেকে। কিন্তু ১৯৯৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় বাসেলের মৃত্যু হয়। এতে সিরিয়ার রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যায়। বাবার উত্তরসূরি হিসেবে দৃশ্যপটে আসেন বাশার আল-আসাদ। তখন বাশার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চক্ষুবিজ্ঞানে উচ্চতর পড়াশোনা করছিলেন। বাবার নির্দেশে দেশে ফেরেন। এরপর সিরিয়ায় সামরিক বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। রাজনৈতিক বিষয়ে হাতে-কলমে জ্ঞানার্জন করতে থাকেন। কাজেই বলা যায়, বাশারকে তাঁর বাবাই একজন শাসক হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। ২০০০ সালে বাবার মৃত্যুর পর মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি দেশের শাসনভার নিজের কাঁধে তুলে নেন। ২০০৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাশার পুনর্নির্বাচিত হন।
ব্যতিক্রমী ও জটিল চরিত্র বাশার
হাফিজ আল-আসাদ তাঁর দীর্ঘদিনের শাসনে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিজের পছন্দের ও বিশ্বস্ত লোকদের নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মাধ্যমে দেশ শাসন করতেন তিনি। বাশার ক্ষমতায় এসে এ পদগুলোয় পরিবর্তন আনতে শুরু করেন। বিশেষ করে নিরাপত্তা সংস্থা ও সামরিক বাহিনীতে রদবদল করেন। নিজের আস্থাভাজন ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ সব পদে বসিয়ে প্রশাসনের লাগাম শুরু থেকেই নিজের হাতে রাখেন বাশার। ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর আগে-পরে একজন সাংবাদিক বেশ কয়েকবার প্রেসিডেন্ট বাশারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তিনি এএফপিকে বলেন, ‘বাশার একজন ব্যতিক্রমী ও জটিল চরিত্রের মানুষ।’ নিজের নাম গোপন রাখার শর্তে বাশারের সঙ্গে দেখা করার অভিজ্ঞতা জানিয়ে ওই সাংবাদিক বলেন, ‘প্রতিবারই তাঁকে বেশ শান্ত দেখেছি। এমনকি যুদ্ধের চরম উত্তেজনার সময়ও বেশ শান্ত থাকেন। বাবার কাছ থেকে এ গুণ পেয়েছেন তিনি।’
সংস্কারক থেকে কর্তৃত্ববাদী
শাসনামলের শুরুর দিকে বাশার সংস্কারের ভূমিকা রাখেন। প্রশাসনিক-রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক উদারীকরণের পথে হাঁটেন। এ ক্ষেত্রে বাবার আমলের বেশ কিছু কঠোর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেন তিনি। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরোধী তিনি। প্রেসিডেন্ট হয়েও শুরুর দিকে আসাদকে সাধারণ জীবন কাটাতে দেখা যেত। গাড়ি চালাতেন নিজেই। ব্রিটিশ-সিরীয় স্ত্রী আসমাকে সঙ্গে নিয়ে রেস্তোরাঁয় নৈশভোজে যেতেন। ওই সময় তরুণ, পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত ও আধুনিক মানসিকতার বাশার সিরীয়দের কাছে পছন্দের মানুষ ছিলেন। তবে পরিস্থিতি ক্রমেই বদলে যায়। সংস্কারকের ভূমিকা থেকে আসাদ কর্তৃত্ববাদী শাসক হয়ে উঠতে শুরু করেন। বিরোধী মত দমনে তাঁর কুখ্যাতি ছড়াতে থাকে। সিরিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয় অনেক সরকারবিরোধী শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবীকে। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমা গণতন্ত্র সিরিয়ার জন্য নয়।’
আরব বসন্ত থেকে গৃহযুদ্ধ
বাশার ক্ষমতা নেওয়ার আগে থেকেই সিরিয়ার তরুণদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, দুর্নীতি, রাজনৈতিক ও বাক্স্বাধীনতার অভাববোধ থেকে তুমুল হতাশা ছিল, যা উসকে দেয় আরব বসন্ত। ২০১১ সালের মার্চে সিরিয়ার দক্ষিণের শহর দেরাতে প্রথম সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। তবে এর আগে দেশটির বিভিন্ন স্থানে ছোট ও বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভ হয়েছিল। বিক্ষোভ দমাতে সরকারি বাহিনীকে মাঠে নামান বাশার। দমন–পীড়নের মুখে বিক্ষোভকারীরা বাশারের পদত্যাগের দাবি তোলেন। এতে বেড়ে যায় দমন-পীড়ন। সেই সঙ্গে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো সিরিয়ায়। একপর্যায়ে বাশারবিরোধীরা হাতে অস্ত্র তুলে নেন। তাঁদের ‘বিদেশি শক্তির মদদে পরিচালিত সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে বাশার সরকার। চলে চরম দমন–পীড়ন। তবে খুব একটা লাভ হয়নি। সিরিয়াজুড়ে শতাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী বাশারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। একের পর এক এলাকা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দেশটিতে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ।
টানা ১৩ বছর গৃহযুদ্ধ
টানা ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে সিরিয়ায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। উদ্বাস্তু হয়েছে দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ। ইতিহাসের সবচেয়ে করুণ মানবিক সংকট শুরু হয় সিরিয়ায়। এত কিছুর পরও আসাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ হয়নি। নিজের কর্তৃত্ব আরও পোক্ত করেন তিনি। দীর্ঘ এ লড়াইয়ে আসাদের পাশে ছিল মিত্র ইরান ও রাশিয়া। লেবাননের হিজবুল্লাহও আসাদের বেশ ঘনিষ্ঠ। এতে পশ্চিমা শক্তিগুলোর ঘোর আপত্তি। বেসামরিক মানুষের নির্বিচার মৃত্যু, ২০১৪ সালের সাজানো নির্বাচন, বেসামরিক মানুষের ওপর রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে তুমুল বিতর্কিত ও সমালোচিত হয়ে আছেন বাশার।
সিরিয়ায় অন্যান্য দেশের হস্তক্ষেপ
বাশার আল-আসাদ সরকারকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে রাশিয়া ও ইরান। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলো বাশার আল-আসাদবিরোধী। তাদের সঙ্গে রয়েছে তুরস্ক, সৌদি আরবসহ আরব দেশগুলোর অনেকেই। ২০১৫ সালে বাশার আল-আসাদ সরকারের সমর্থনে বিমান হামলার মধ্য দিয়ে সিরিয়া যুদ্ধে প্রকাশ্যে জড়িয়ে পড়ে রাশিয়া। মস্কোর দাবি, তারা সিরিয়ায় শুধু ‘সন্ত্রাসীদের’ স্থাপনায় হামলা চালায়। তবে পশ্চিমারা বলে থাকে, রুশ হামলায় সশস্ত্র বিদ্রোহী ও বেসামরিক মানুষজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
বাশার আল-আসাদকে অস্ত্র, অর্থ, যোদ্ধা দিয়ে সহায়তা করছে ইরান। তেহরানের অর্থায়নে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ পাওয়া হাজারো শিয়া মিলিশিয়া সিরিয়াজুড়ে লড়াই করছে। তাদের বেশির ভাগ লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইরাক, আফগানিস্তান, ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকেই সিরিয়ায় গিয়ে বাশার আল-আসাদের হয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল।
অন্যদিকে বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না পশ্চিমারা। তাই তারা আসাদবিরোধী সশস্ত্র মিলিশিয়াদের অস্ত্র ও অর্থ জোগান দিয়েছে, দিচ্ছে। কুর্দি ও বাশার আল-আসাদবিরোধী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) সহায়তার জন্য ২০১৪ সাল থেকেই দেশটিতে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে পশ্চিমারা। তুরস্ক পশ্চিমা জোটের সঙ্গে থাকলেও কুর্দিদের ক্রম উত্থানে ভীত। কেননা, দেশটির সীমান্ত এলাকায় অনেক কুর্দির আবাস। ইরানের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইসরায়েল ও সৌদি আরবও সংগত কারণে পশ্চিমা জোটের সঙ্গে রয়েছে। দেশটিতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলও।
ভুগছে সাধারণ মানুষ
যুদ্ধ শুরুর আগে সিরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ২ কোটি ২০ লাখ। তাদের অর্ধেকের বেশি যুদ্ধের কারণে উদ্বাস্তু হয়েছে। প্রায় ৭০ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে প্রাণ বাঁচাতে সিরিয়ার এক শহর থেকে অন্যত্র চলে গেছেন। প্রায় ২০ লাখ অসহায় মানুষ বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে জায়গা জুটিয়েছে। ন্যূনতম মৌলিক সেবা ছাড়া সেসব শিবিরে তাদের মানবেতর জীবন কাটছে। আরও প্রায় ৬৮ লাখ সিরিয়াবাসী প্রতিবেশী লেবানন, জর্ডান, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গেছে। অনেকে শরণার্থী হিসেবে ইউরোপে আশ্রয় নিয়েছে। সিরীয়দের দেশ ছাড়ার এসব ঘটনাকে সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট বলে মত বিশ্লেষকদের। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে করোনা মহামারি। করোনা মোকাবিলায় সিরিয়ায় মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষকে টিকার পূর্ণাঙ্গ ডোজের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা। সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া লেবানন চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। সেদেশেও চলছে যুদ্ধ। কোথায় যাবে এই সিরীয়রা। বিদ্রোহী নতুন সরকার কি একটি মানবিক সিরিয়া গঠন করবে? নাকি আবারও পালানোর পথ খুঁজবে সাধারণ মানুষ!