শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭:১৫, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ১৬:০২, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫
রাজধানীর গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। নানা কারণে এই প্রকল্প সফলতার মুখ দেখেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আবারও এটি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, নির্ধারিত রুট ধরে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে একক কোম্পানির আওতায় চলবে ঢাকার সব বাস। এর বাইরে কোনও বাস চলতে দেওয়া হবে না। সেই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কয়েক মাস ধরে কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট অংশীজনেরা।
ডিটিসিএ সূত্রে জানা যায়, ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে এক কোম্পানির আওতায় আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বাস চলাচল শুরুর প্রস্তুতি চলছে। তবে শুরুতেই পুরো রাজধানীতে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বাস রুট রেশনালাইজেশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকাজুড়ে যে ৯টি ভিন্ন রঙের বাস চলার কথা রয়েছে, তার মধ্যে গ্রিন ক্লাস্টার (সবুজ গুচ্ছ) চালু হচ্ছে প্রথমে। সেখানেও কাজ অসম্পূর্ণ। গ্রিন ক্লাস্টারের জন্য নির্ধারিত আটটি রুটের মধ্যে ছয়টি রুটে আপাতত ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ চালানো হবে।
তবে এই উদ্যোগের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই মালিক সমিতি ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে অসামঞ্জস্য ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ডিটিসিএ’র ঘোষণার পরও বাস মালিকরা নিজেদের ব্যবস্থাপনায় চলাচলের পরিকল্পনা করছে। এর ফলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বদলে গণপরিবহনে নতুন করে বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, গ্রিন ক্লাস্টারের চলাচলের জন্য মোট ৪০টিরও অধিক বাস কোম্পানির আবেদন আসে। এর মধ্যে ১২টি কোম্পানিকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সব সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি বিআরটিএ ও জরিপের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া যাত্রীসেবার মান নিশ্চিত করতে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা, কাউন্টার, যাত্রী ছাউনি এবং সুনির্দিষ্ট একটি ব্যবস্থাপনা টিম গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প পরিচালক ধ্রুব আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সড়ক পরিবহন উপদেষ্টার প্রচেষ্টা এবং আগ্রহে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা নগর পরিবহনের গ্রিন ক্লাস্টার অংশ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর জন্য যাচাই-বাছাই করে কয়েকটি কোম্পানির বাস নেওয়া হয়েছে। বাকি রুটগুলোও পর্যায়ক্রমে এক কোম্পানির আওতায় আনা হবে।’
তবে বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প নিয়ে এখনও স্পষ্ট অবস্থানে নেই ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তাদের দাবি, এক কোম্পানির আওতায় বাস চালানোর পরিকল্পনার শর্তাবলি বা মালিকদের সুবিধা সংক্রান্ত বিষয়গুলো এখনও পরিষ্কার নয়। বাস মালিকরা অভিযোগ করছেন, ডিটিসিএ’র পরিকল্পনায় ব্যক্তিগত বাস যুক্ত হলে সেগুলোর অনেকগুলো ফিটনেস ইস্যুতে বাদ পড়তে পারে। আর নতুন বাস কেনার জন্য কোনও সরকারি সহায়তার আশ্বাসও তারা পাননি।
এই বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তারা বলছেন এক কোম্পানি। যদি এক কোম্পানির আওতায় বাস চালাতে চায়, সেক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে একটি কোম্পানিই থাকবে, তাদেরই সব বাস। আর যদি বিভিন্ন কোম্পানির বাসকে একটি কোম্পানির আওতায় নিয়ে আসতে চায়, তাহলে কী শর্তে কোম্পানিগুলো আসবে, কীভাবে পরিচালিত হবে; এ নিয়ে এখনও আলোচনার বিষয় রয়েছে।’
মালিক সমিতি জানিয়েছে, ডিটিসিএ'র কার্যক্রম তাদের নিকট স্পষ্ট না হওয়ায় তারা নিজেদের উদ্যোগে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রুটে বাস চালানোর পরিকল্পনা করছে। এসব রুটে টিকিট কাউন্টারের মাধ্যমে বাস পরিচালনা করা হবে। তবে বিভিন্ন বাস কোম্পানির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তাদের পরিকল্পনা নিয়েও পরিষ্কার কোনও ধারণা পাওয়া যায়নি।
নিজস্ব ব্যবস্থাপনার কথা জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, ‘এখন আমরা চাচ্ছি যে তিনটা রুট খুব ভাইটাল- যেমন একটা হলো আবদুল্লাহপুরভিত্তিক, একটা গাবতলীভিত্তিক, আরেকটা হলো মিরপুর-১০ নম্বর থেকে যে রুট যায়। এসব রুটে ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ থেকে টিকিট কাউন্টারের মাধ্যমে চালানোর জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে রেভিনিউটা স্টাফদের হাতে না থাকে। এতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আসবে আশা রাখি। আমাদের আদলেই বিআরটিএ ও ডিটিসিএ যদি সমন্বয় করে, তা আরও কার্যকর হবে।’